উত্তরঃ
ইন্টেলিজেন্স:- তথ্য সংগ্রহকারীর পরিচয় সম্পূর্ণরূপে গোপন রেখে কোন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই উক্ত বিষয় সম্পর্কে প্রকাশ্য উৎস ও গোপন উৎস হতে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে তথ্য সংগ্রহ করাকে ইন্টেলিজেন্স বা গোয়েন্দা পদ্ধতি বলে। কোন অপরাধ দমনের জন্য উহা সংঘটনের পূর্বেই ইন্টেলিজেন্স বা গোয়েন্দা রিপোর্টের আলোকে অগ্রিম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে অপরাধ ঠেকানো হয়। কোন একটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে উক্ত বিষয় সম্পর্কে গৃহীত অগ্রিম তথ্য হলো ইন্টেলিজেন্স বা গোয়েন্দা তথ্য। আর অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর উক্ত বিষয় সম্পর্কে উদঘাটিত তথ্য হলো তদন্ত রিপোর্ট। এ বাক্য হতে বুঝা যায় যে, ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট ঘটনা ঘটার পূর্বে সংগ্রহ করা হয়, আর তদন্ত রিপোর্ট ঘটনা ঘটার পরে সংগ্রহ করা হয়। পিআরবি বিধি ২৯৫, ৩৩৬, ৩৩৭, ৩৩৮, ৩৩৯, ৩৪০, ৩৪১, ৩৪২, ৩৪৩, ৩৪৪, ৩৪৫।
** ইন্টেলিজেন্স প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ ক) প্রকাশ্য ইন্টেলিজেন্স, খ) গোপনীয় ইন্টেলিজেন্স।
নিম্নে উভয় প্রকার ইন্টেলিজেন্স এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হলোঃ
ক) প্রকাশ্য ইন্টেলিজেন্স এর তথ্য উৎস সমূহ হলো- ১। টেলিভিশন, ২। রেডিও, ৩। সংবাদপত্র ৪। ম্যাগাজিন ৫। লিফলেট ৬। পোস্টার, ৭। সভা-সমাবেশ ৮। প্রকাশ্য কার্যালয়, ৯। উন্মুক্ত নোটিশ বোর্ড, ১০। ওয়েবসাইট বা ওয়েব পোর্টাল ১১। প্রেস ব্রিফিং ১২। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ইত্যাদি।
খ) গোপনীয় ইন্টেলিজেন্স এর তথ্য উৎস সমূহ হলো- ১। গোপনীয় তথ্যদাতা, ২। গুপ্তচর, ৩। টেলিফোন বা মোবাইল ফোনে আড়িপাড়া যন্ত্র ৪। মোবাইল কল ডিটেইলড রিপোর্ট ৫। আইপি ট্র্যাকিং, ৬। ই-মেইল ট্র্যাকিং, ৭। ইলেকট্রনিক সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট ট্র্যাকিং, ৮। আইটি সার্ভার ট্র্যাকিং, ৯। ডিএনএ প্রোফাইল ১০। ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রোফাইল ১১। রেটিনা প্রোফাইল ১২। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস ১২। গোপনীয় চিঠিপত্র। পিআরবি বিধি ২৯৫, ৩৩৬ হতে ৩৪৫।
একটি থানা এলাকায় নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে প্রকাশ্য ও গোপন উৎস হতে ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করা যায়ঃ
১। টার্গেট ব্যক্তি বা সংস্থা সম্পর্কে টেলিভিশন বা রেডিও তে প্রচারিত সংবাদ হতে ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করা যায়।
২। টার্গেট ব্যক্তি বা সংস্থা সম্পর্কে জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্রে প্রচারিত সংবাদ হতে ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করা যায়।
৩। ম্যাগাজিন, লিফলেট, পোস্টার হতে ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করা যায়।
৪। টার্গেট সংস্থার যে কোন সভা-সমাবেশ বা সম্মেলন হতে ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করা যায়।
৫। সংস্থার কোন প্রকাশ্য অফিস ও উন্মুক্ত নোটিশ বোর্ড হতে সংগ্রহ করা যায়।
৬। সংস্থার ওয়েবসাইট বা ওয়েব পোর্টাল হতে সংগ্রহ করা যায়।
৭। সংস্থাটি কোন বিশেষ সময়ে কোন বিশেষ বিষয়ে কোন প্রেস ব্রিফিং বা ঘোষণা জারী করলে।
৮। টার্গেট ব্যক্তি বা সংস্থা সম্পর্কে কোন গোপনীয় তথ্যদাতা হতে সংগ্রহ করা যায়।
৯। দক্ষ গুপ্তচর নিয়োগ করে নির্দিষ্ট সময় নিয়ে অনুসরণ ও নজরদারীর মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়।
১০। টার্গেট ব্যক্তি বা সংস্থার অফিস বা বাড়ীর আশপাশের লোকজন বা প্রতিবেশীর নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
১১। সমাজের সাধারণ মানুষের কাছ ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করা যায়।
১২। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি’দের আলাপকালে টার্গেট ব্যক্তি বা সংস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
১৩। মসজিদের ইমামগণের সাথে আলাপকালে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
১৪। টেলিফোন ও মোবাইলে আড়িপেতে, কল ডিটেইলড রিপোর্ট, আইপি ট্র্যাকিং ও ই-মেইল ট্র্যাকিং করে সংগ্রহ করা যায়।
১৫। সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট ট্র্যাকিং,আইটি সার্ভার ট্র্যাকিং, ডিএনএ প্রোফাইল, ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রোফাইল হতে পাওয়া যায়।
১৬। রেটিনা প্রোফাইল, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস এর মাধ্যমে ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করা যায়। পিআরবি বিধি ২৯৫, ৩৩৬ হতে ৩৪৫।
প্রাপ্ত ইন্টেলিজেন্স পর্যালোচনা ও প্রয়োগ পদ্ধতি:-
১। প্রাপ্ত ইন্টেলিজেন্স বা গোয়েন্দা তথ্যের সঠিকতা যাচাই ও মূল্যায়ন করে এর মাননিশ্চিতকরণ।
২। প্রয়োজনে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করা।
৩। প্রাপ্ত ইন্টেলিজেন্স বা গোয়েন্দা তথ্য শ্রেনীবিন্যাস করে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উহা পর্যালোচনা।
৪। পর্যালোচনা শেষে অপরাধ দমন সংক্রান্তে নীতি নির্ধারক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
৫। অপরাধ দমন, প্রতিরোধ ও সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক বা নাশকতামূলক ঘটনা ঠেকানোর জন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অ্যাকশন বা অপারেশন পরিচালনার উদ্দেশ্যে প্রাপ্ত ইন্টেলিজেন্স মাঠ পর্যায়ের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তথা থানা পুলিশ, ডিবি বা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে প্রেরণ এবং অপারেশন পরিচালনার নির্দেশ দান।
অপরাধ দমনে ইন্টেলিজেন্স এর ভূমিকা নিম্নেআলোচনা করা হলোঃ
অপরাধ দমনে ইন্টেলিজেন্স এর ভূমিকা অপরিসীম। অপরাধ দমন, প্রতিরোধ ও সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক বা নাশকতামূলক ঘটনা ঠেকানোর জন্য যে কোন অপারেশন বা পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধান হাতিয়ার হলো ইন্টেলিজেন্স। ইন্টেলিজেন্স হতে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে সঠিক ও সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। অপরাধীদের দমন ও গ্রেফতার করা সহজতর হয়। ফলে কোন সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা সংস্থার সম্ভাব্য সন্ত্রাসী বা নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কাজ হতে থানা এলাকা তথা সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখতে ইন্টেলিজেন্স এর কোন বিকল্প নাই। ইন্টেলিজেন্স ছাড়া বড় ধরণের ধ্বংসাত্মক বা নাশকতামূলক অপরাধ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তাই অপরাধ দমনে ইন্টেলিজেন্স এর গুরুত্ব সর্বোচ্চ।