উত্তরঃ
প্রচলিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর আলোকে মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে যে সকল অসুবিধা ও বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় তা নিম্নেআলোচনা করা হলোঃ
১। দহনকারী, ক্ষয়কারী বা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা আহত বিষয়ক অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে ভিকটিমের জখমী সনদ বা মেডিকেল সনদ পেতে বিলম্ব হওয়া। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ৪ ধারা, সাক্ষ্য আইনের ৪৫ ধারা।
২। প্রায়শঃ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক কিশোরী বা নারী প্রেমের সম্পর্কের কারণে স্বেচ্চায় গৃহ ত্যাগ করে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। এক্ষেত্রে অভিভাবক কর্তৃক অপহরণ মামলা দায়ের করার পর উক্ত মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা ভিকটিম উদ্ধারে ব্যর্থ হন। কারণ ভিকটিম স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে বা দূরবর্তী স্থানে পালিয়ে থাকায় তাকে উদ্ধার সম্ভব হয় না। ফলে তদন্তে অগ্রগতি হয় না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ৭/৩০ ধারা।
৩। অনেক সময় নারী ও পুরুষ বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক, পরকীয়া, যেক্সন ব্যবসা ও অবৈধ লাভের আশায় উভয়ের সম্মতিক্রমে স্বেচ্ছায় যেক্সন সঙ্গমের পর কোন কারণে উভয়ের মধ্যে স্বার্থের ব্যাঘাত জনিত কারণে ঐ নারী কর্তৃক ধর্ষণের মামলা দায়ের করলে ধর্ষিতার মেডিকেল পরীক্ষা করানো ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা অসুবিধার সম্মুখীন হয়। কারণ উভয়ের সম্মতিক্রমে স্বেচ্ছায় যেক্সন সঙ্গমের ফলে ঘটনাস্থলে ধর্ষণের ক্রাইমসিন ও আলামত পাওয়া যায় না এবং মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত ও তথ্য পাওয়া যায় না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ৯(১) ধারা, সাক্ষ্য আইনের ৪৫ ধারা, পিআরবি বিধি ৬৩৫, ৬৩৮।
৪। প্রায়শঃ গ্রাম এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে বাদী পক্ষ তাদের পরিবারের কোন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টার অপরাধে বিবাদীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ৯(৪)(খ) ধারায় মামলা দায়ের করেন। প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর অভাবে ও পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে এই ধারায় রেকর্ডকৃত মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা বিপত্তীর সম্মুখীন হন।
৫। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ৯ক ধারায় রেকর্ডকৃত মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে সম্মানহানি হওয়ার কারণে কোন নারী আত্মহত্যা করলে আত্মহত্যা পূর্ববর্তী সম্ভ্রমহানির বিষয়ে সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা দুরূহ ব্যাপার।
৬। কোন স্ত্রীর সাথে তার স্বামী বা স্বামীর পরিবারের সাথে মনোমালিন্য, পরকীয়া, সাংসারিক অনীহা, দৈনন্দিন বিষয়ে ঝগড়া বিবাদ ও মারামারির কারণে উভয় পক্ষ যখন সংসার টিকিয়ে রাখতে বা পারিবারিকভাবে মীমাংসা করতে ব্যর্থ হন তখন স্ত্রী পক্ষ কর্তৃক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ১১(গ) ধারায় রুজুকৃত যেক্সতুকের জন্য সাধারণ জখমের মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহে ব্যর্থ হন।
মিথ্যা মামলা রুজুকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা:- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ১৭ ধারা অনুসারে মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর আলোকে যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে এই আইনের অন্য কোন ধারায় মিথ্যা মামলা বা অভিযোগ দায়ের করে তাহলে বিজ্ঞ আদালত মিথ্যা মামলা দায়েরকারী ব্যক্তিকে অনধিক ৭ বছর কারাদন্ড এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ড প্রদান করতে পারবেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ১৭ ধারা।