প্রশ্ন- ১। সুরতহাল রিপোর্ট কাকে বলে? সুরতহাল রিপোর্টের আইনগত ভিত্তি কি ? সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের নিয়মাবলী লিখ বা সুরতহাল রিপোর্টে কি কি বিষয় উল্লেখ থাকে বর্ণনা কর।
উত্তর:- সুরতহাল রিপোর্টঃ কোন ব্যক্তি আত্মহত্যা করলে বা খুন হলে বা কোন দুর্ঘটনায় মারা গেলে পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক মৃত দেহের যে রিপোর্ট লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে সুরতহাল রিপোর্ট বলে। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৭৪, ১৭৫ ধারা এবং পিআরবি বিধি ২৯৯, ৩০০। সুরতহাল রিপোর্টের আইনগত ভিত্তি:- ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৪, ১৭৫ ধারা ও পিআরবি বিধি ২৯৯, ৩০০ বিধি অনুসারে প্রস্তুতকৃত লাশের সুরতহাল রিপোর্ট সাক্ষ্য আইনের ৯, ৩৫, ৭৪ ধারা আদালতে প্রাসঙ্গিক এবং সংশ্লিষ্ট ঘটনা প্রমাণের ক্ষেত্রে একটি সাক্ষ্য। কোন হত্যা, আত্মহত্যা, দূর্ঘটনার ফলে মৃত্যু বা অপমৃত্যু ইত্যাদি ক্ষেত্রে লাশের মৃত্যুর কারণ নির্নয়ের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে সুরতহাল রিপোর্ট। সাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে আদালতে ইহা গুরুত্ব অপরিসীম।
সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের নিয়মাবলীঃ একটি পূর্নাঙ্গ সুরতহাল রিপোর্টে নিম্নবর্ণিত বিষয়াবলী উল্লেখ থাকতে হবেঃ-
১। সূত্র:- সূত্র হিসেবে জিডি বা মামলা নং উল্লেখ করতে হবে
২। সুরতহাল প্রস্তুতের তারিখ, সময় ও স্থান।
৩। লাশ প্রাপ্তি স্থানের পূর্ণ বর্ণনা।
৪। মৃত ব্যক্তির পরিচিতিঃ নাম, বয়স, পিতা/মাতার নাম, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, লিঙ্গ, ধর্ম।
৫। মৃত ব্যক্তির সনাক্তকারীর পরিচিতিঃ নাম, বয়স, পিতা/মাতার নাম, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, মৃত ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক।
৬। উপস্থিত সাক্ষীগণের পরিচিতিঃ নাম, বয়স, পিতা/মাতার নাম, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা।
৭। গোপন অঙ্গসমূহের অবস্থা (মহিলা হলে অন্য মহিলা দ্বারা পরীক্ষা করাতে হবে)। অজ্ঞাত পুরুষ হলে খৎনা করা আছে কিনা।
৮। লাশের অবস্থা:- লাশের ছবি তুলতে হবে, বস্ত্র পরিহিত ও নগড়ব উভয় অবস্থায়।
৯। লাশের শরীরে থাকা জিনিসপত্রের বর্ণনাঃ ঘড়ি, আংটি, গহনা, শাখা, তাবিজ, চশমা ইত্যাদি।
১০। লাশের শারীরিক বর্ণনা (মাথা হতে পা পর্যন্ত লক্ষণসমূহ)ঃ চেহারার বর্ণনা, মুখমন্ডলের আকৃতি, চুলসহ মাথার বর্ণনা, গায়ের রং, চক্ষু, জিহবা, কান, নাক, হাত ও পা, দাঁড়ি ও গোঁফ, জন্মগত/বিশেষ সনাক্তকরণ চিহ্ন ইত্যাদি।
১১। লাশের পরিধেয় বস্ত্রের বর্ণনাঃ কাপড়ের ধরণ ও রং, পরিধেয় বস্ত্রে কোন চিহ্নের বিবরণ।
১২। আঘাতের ধরণঃ অস্ত্রের আঘাত, দাহ্য পদার্থের আঘাত, রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন।
১৩। লাশের শরীরে কৃত্রিম চিহ্নের বর্ণনাঃ উল্কি, নামাযী ব্যক্তির কপালের দাগ, মেহেদীরং, সিঁথিতে সিঁদুর ইত্যাদি।
১৪। আঘাত ব্যতীত অন্যান্য কারণে মৃত্যুর বর্ণনাঃ ফাঁসিতে, শ্বাসরোধজনিত কারণে, বিষ প্রয়োগে/বিষপানে, পানিতে ডুবে, বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে, আগুনে পুড়ে মৃত্যু ইত্যাদি।
১৫। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য।
১৬। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সুরতহাল প্রস্তুতকারী অফিসারের মন্তব্য।
১৭। স্বাক্ষীগণের স্বাক্ষর।
১৮। লাশ নিষ্পত্তি সম্পর্কে গৃহীত ব্যবস্থা।
১৯। প্রস্তুতকারী অফিসারের স্বাক্ষর, পদবী, থানা ও জেলা/ইউনিটের নাম, তারিখ।
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৭৪, ১৭৫ ধারা এবং পিআরবি বিধি ২৯৯, ৩০৪, ৩০৫, ৩০৬।