উত্তর:- জামিন:- জামিন এর সংজ্ঞা ফৌজদারী কার্যবিধিতে প্রদান করা হয়নি। তবে জামিন বলতে আমরা বুঝি আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বা আদালত চাহিবামাত্র কোন ব্যক্তিকে কোন নির্দিষ্ট তারিখ, সময় ও স্থানে হাজির করার নিশ্চয়তা বিধান করাকেই জামিন বলে। যিনি নিশ্চয়তা বিধান করার জন্য অঙ্গীকার করে হেফাজতে নেন তাকে জামিনদার বলে। জামিন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। বিজ্ঞ আদালত জামিনযোগ্য যে কোন অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ধারায় আসামীকে জামিন দিতে পারেন। এছাড়া আসামী জামিনযোগ্য অপরাধে বা বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হলে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫৭(২), ৫৯(৩), ১৬৯, ১৭০, ৪৯৬, ৪৯৭(২) ধারা মোতাবেক থানার অফিসার ইনচার্জ আসামীকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন।
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে একজন পুলিশ অফিসার বা থানার ওসি গ্রেফতারকৃত আসামীকে ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াই জামিনে মুক্তি দিতে পারেনঃ-
১। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫৭(২) ধারা মতে আমলের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি পুলিশ অফিসার কর্তৃক গ্রেফতার হলে আসামীর প্রকৃত নাম ঠিকানা পাওয়ার পর মুচলেকা নিয়ে আসামীকে মুক্তি দিতে পারেন।
২। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫৯(৩) ধারা মতে গ্রেফতারকৃত আসামীর প্রকৃত নাম ঠিকানা পাওয়ার পর পুলিশ অফিসার যদি মনে করেন যে, আসামী কোন অপরাধ করেছে বলে যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ নেই তখন মুচলেকা নিয়ে আসামীকে ছেড়ে দিতে পারেন।
৩। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৯ ধারা মতে মামলা তদন্তের পর তদন্তকারী অফিসারের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, আসামীকে কোর্টে হাজির করার প্রয়োজন নেই বা তার বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত কোন অভিযোগ নেই তাহলে মুচলেকা নিয়ে আসামীকে ছেড়ে দিতে পারেন।
৪। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৯৬ ও ৪৯৭(১) ধারা মতে জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি থানার ওসি কর্তৃক বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হলে উক্ত ব্যক্তির নিকট হতে মুচলেকা নিয়ে জামিনে মুক্তি দেয়া যাবে। তবে আসামী যদি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধে দোষী বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে তাহলে আসামীকে জামিনে মুক্তি দেয়া যাবে না। পিআরবি বিধি ৩১৭।
৫। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি যদি শিশু হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রকৃতি ও শিশুর মানসিক ও আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে শিশুর পিতা-মাতা বা অভিভাবক ও প্রবেশন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শিশুকে মেক্সখিক বা লিখিতভাবে সতর্ক করে থানার শিশু বিষয়ক পুলিশ অফিসার বা ওসি জামিন দিতে পারেন। শিশু আইন ২০১৩ এর ৪৭(২), ৫২ ধারা।
৬। রেলওয়ে আইনের ১৩২(২) ধারা, আফিম আইনের ২০(গ) ধারা মতে পুলিশ অফিসার বা থানার ওসি কোন ব্যক্তিকে জামিন দিতে পারেন।
৭। কোন আসামীকে জামিন প্রদানের সময় আসামীর নিজের মুচলেকায় বা জামিনদারের জিম্মায় বা আদালতের বিশেষ আদেশের মাধ্যমে জামিনে মুক্তি দিতে হবে। কার্যবিধির ৬৩ ধারা, পিআরবি বিধি ৩১৭।
উত্তর:- থানা/পুলিশ হেফাজতে আসামী মারা গেলে পুলিশ অফিসারের করনীয় নিম্নেউল্লেখ করা হলো-
১। থানা হেফাজতে আসামী মারা গেলে কিংবা আত্মহত্যা করলে থানার কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের প্রথম করণীয় হবে পুলিশ আইনের ৪৪ ধারা, ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৫৪, ১৫৫ ধারা এবং পিআরবি বিধি ৩৭৭ মতে মৃত্যুর ঘটনাটি জিডিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
২। বিষয়টি সাথে সাথে ওসিসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৫০ ধারা, পিআরবি বিধি ১২০।
৩। পুলিশ অফিসার নিজে বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করবেন। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৭৪ ধারা, পিআরবি বিধি ২৯৯।
৪। ওসি’র অবর্তমানে মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে নিকটতম ম্যাজিষ্ট্রেটকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য আবেদন জানাতে হবে। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৭৬ ধারা।
৫। হাজতখানায় লাশ যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকবে।
৬। পুলিশ অফিসার উক্ত লাশের এবং ঘটনাস্থলের ছবি তুলে রাখবেন। পিআরবি বিধি ৬৩৫, ৬৩৮
৭। ম্যাজিষ্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের তদন্তভার গ্রহণ করবেন, নিজে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করবেন এবং লাশের চালান ফরমে স্বাক্ষর করবেন। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৭৬(১), পিআরবি বিধি ৩০২(খ)।
৮। পুলিশ অফিসার ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশে মফস্বল সিসির মাধ্যমে কনস্টেবল মারফতে ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক প্রস্তুত করা সুরতহাল রিপোর্ট ও চালান ফরম দিয়ে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্নয়ের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করবেন। পিআরবি বিধি ৩০৪, ৩০৫।
৯। লাশ ময়না তদন্ত ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার আত্মীয়-স্বজনের নিকট বা নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। পিআরবি বিধি ৩১০।