উত্তরঃ কোন আসামীকে গ্রেফতারের পূর্বে, সময় ও পরের যে সকল কার্যপদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে তা নিম্নেআলোচনা করা হলোঃ-
গ্রেফতারের পূর্বের নিয়মাবলীঃ
১। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষনাপত্র ১৯৪৮ এর ৯ ধারা মতে কাউকে খেয়াল খুশিমত গ্রেফতার, আটক বা নির্বাসন করা যাবে না।
২। যাকে গ্রেফতার করা হবে তার নাম ঠিকানা যাচাই করে প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেফতার করতে হবে। কার্যবিধির ধারা ৪৬, পিআরবি বিধি ৩১৬
৩। গ্রেফতারকারী পুলিশ অফিসার প্রথমেই নিজের পরিচয় দিবেন। পিআরবি বিধি ২২০
৪। যাকে গ্রেফতার করা হবে গ্রেফতারের কারণ সম্পর্কে তাকে অবগত করাতে হবে। বাংলাদেশ সংবিধান ৩৩ অনুচ্ছেদ। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৮০, ৪৬ ধারা।
৫। জরুরী বা সেবামূলক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে গ্রেফতার সময় তার বদলী আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পিআরবি বিধি ৩১৮।
৬। ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট সাথে রাখতে হবে। প্রয়োজনে আসামীকে ওয়ারেন্ট দেখাতে হবে। ফৌজদারী কার্যবিধির ৭৫ ধারা।
৭। গ্রেফতারকারী পুলিশ অফিসারকে অস্ত্রসহ পোশাক পরিহিত অবস্থায় থাকতে হবে। পিআরবি বিধি ৯৫১।
গ্রেফতারের সময় নিয়মাবলীঃ
১। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৮০ ধারা মতে আসামীকে গ্রেফতারের সারমর্ম জানাতে হবে।
২। আসামী যদি স্বেচ্ছায় ধরা না দেয় তবে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৬ ধারা মতে তার দেহ স্পর্শ করে গ্রেফতার করতে হবে। প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করতঃ সকল কেক্সশল অবলম্বন করতে হবে। পিআরবি বিধি ৩১৬।
৩। যাকে গ্রেফতার করা হবে সে যদি গ্রেফতার এড়ানোর জন্য কোন স্থানে লুকায় তাহলে সে স্থানের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুমতি নিয়ে উক্ত স্থানে প্রবেশ করে গ্রেফতার কার্যকর করা যাবে। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৭ ধারা।
৪। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৭ ধারা মতে যদি কোন স্থানের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট হতে উক্ত স্থানে প্রবেশের অনুমতি না পাওয়া যায় তাহলে দরজা জানালা ভেঙ্গে সেখানে প্রবেশ করে গ্রেফতার কার্যকর করা যাবে। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৮ ধারা।
৫। গ্রেফতার কার্যকর করতে গিয়ে যদি গ্রেফতারকারী পুলিশ অফিসার কোন স্থানে আটকা পড়ে যান তাহলে উক্ত স্থানের দরজা জানালা ভেঙ্গে নিজেকে মুক্ত করা যাবে। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৯ ধারা।
৬। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫০ ধারা মতে আসামীর গ্রেফতার বা পলায়ন প্রতিরোধের জন্য যতটুকু বল প্রয়োগ করা প্রয়োজন ঠিক ততটুকু বল প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রয়োজনের অধিক বল প্রয়োগ করা যাবে না।
৭। প্রয়োজনে গ্রেফতারের সময় ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪২ ধারা মতে জনসাধারণের সাহায্য নিতে হবে।
গ্রেফতারের পরের নিয়মাবলীঃ
১। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে পুলিশ অফিসার দেহ তল্লাশি করে প্রয়োজনীয় পরিধেয় বস্ত্র ব্যতীত তার নিকট যা পাওয়া যাবে তা তালিকা তৈরী করে হেফাজতে নিতে হবে এবং মালামালের তালিকার একটি কপি আসামীকে দিতে হবে। ফৌজদারীকার্যবিধি আইনের ৫১ ধারা, পিআরবি বিধি ৩২২।
২। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি কোন মহিলা হলে তার শালীনতার প্রতি খেয়াল রেখে অপর একজন মহিলা বা মহিলা পুলিশ দিয়ে দেহ তল্লাশি করতে হবে এবং তার নিকট পরিধেয় বস্ত্রসহ চুড়ি, শঙ্খ, বালা ব্যতীত অন্য যে সকল জিনিস পাওয়া যাবে তার একটি তালিকা তৈরী করে হেফাজতে নিতে হবে এবং তালিকার একটি কপি আসামীকে দিতে হবে। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫২ ধারা।
৩। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫৩ ধারা মতে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নিকট কোন আপত্তিকর অস্ত্রশস্ত্র বা মালামাল পাওয়া গেলে হেফাজতে নিতে হবে এবং ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১০৩(২) ধারা মতে মালামালের একটি জব্দ তালিকা তৈরী করতে হবে। পিআরবি বিধি ২৮০।
৪। আসামী যদি অসুস্থ হয় তাহলে তার চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। পিআরবি বিধি ৩২১।
৫। আসামীর শরীরে যদি কোন আঘাতের চিহ্ন থাকে তাহলে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আঘাতের চিহ্ন পর্যবেক্ষণ করতঃ জিডিতে নোট দিতে হবে। পিআরবি বিধি ২৬২, ৩২৮।
৬। থানার হাজতখানায় একজন বন্দীর জন্য কমপক্ষে ৩৬ বর্গফুট জায়গা দিতে হবে। পিআরবি বিধি ৩২৭
৭। হাজতখানার ভিতরে আত্মহত্যা করার মত কোন উপকরণ যেমন রশি, লাঠি, ধাতব বস্তু ইত্যাদি জিনিস থাকলে তা সরিয়ে নিতে হবে এবং হাজতখানার দরজা জানালা ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হবে। পিআরবি বিধি ৩২৮।
৮। পিআরবি বিধি ৩২৯ মতে হাজতখানায় আসামী রাখার আগে সেন্ট্রি নিয়োগ করতে হবে।
৯। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি অসুস্থ্য হলে উপযুক্ত চিকিৎসা পাবার এবং খাদ্য ও নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে। পিআরবি বিধি ৩২১ ও ৩৩৩।
১০। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ধরণ অনুযায়ী মামলা রুজু করে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৬০, ৬১, ৮১ ধারা মতে যথাসময়ে কোর্টে প্রেরণ করতে হবে।
১১। অপরাধের সত্যতা উদঘাটনের লক্ষ্যে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৭ ধারা মতে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট রিমান্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। পিআরবি বিধি ৩২৪।