উত্তরঃ
কেস ডায়রী:- তদন্তকারী পুলিশ অফিসার মামলা তদন্তকালে তার প্রতিদিনের মামলা তদন্তের ধারা বিবরণীসহ অগ্রগতি প্রতিবেদন যে নির্ধারিত বিপি ফরম নং-৩৮ এ লিপিবদ্ধ করে রাখেন তাকে কেস ডায়রী বলে। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৭২ ধারা ও পিআরবি বিধি ২৬৩।
কেস ডায়রী বা সিডি কয়েকটি খন্ড বা অংশে বিভক্ত থাকে। যথা- প্রথম সিডি,
মধ্যবর্তীকালীন সিডি সমূহ ও শেষ সিডি।
নিম্নে সিডি বা কেস ডায়রীতে যে সকল বিষয় উল্লেখ থাকে তা বর্ণনা করা হলোঃ
১। ঘটনাস্থল,
ঘটনার তারিখ ও সময়,
মামলা রেকর্ডের তারিখ ও সময়,
মামলা রেকর্ডকারী অফিসারের নাম ও পদবী,
মামলা তদন্তকারী অফিসারের নাম ও পদবী।
২। অভিযুক্ত বা এজাহারনামীয় আসামীগণের নাম ঠিকানা
৩। অভিযোগের মূল বিষয়বস্তু
৪। ডায়রী পত্তনের স্থান,
তারিখ ও সময়
৫। এজাহার প্রাপ্তি ও পর্যালোচনা,
থানার রেকর্ডপত্র ও পূর্ববর্তী অপরাধের পর্যালোচনা ও নোট।
৬। ঘটনাস্থলে রওনাকালীন সঙ্গীয় ফোর্সের নাম,
পদবী,
ঘটনাস্থলে পেক্সছানোর সময়কাল,
পরিদর্শন ও সংক্ষিপ্ত নোট।
৭। বাদীকে অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ,
এজাহারের সংগতি ও অসংগতি নোট,
খসড়া মানচিত্র ও সূচীপত্রের বিবরণ।
৮। তদন্তের জন্য যে সকল স্থান পরিদর্শন ও তল্লাশি করা হয়েছে,
কি কি ক্রাইমসিন সংগ্রহ ও আলামত জব্দ করা হয়েছে।
৯। ফেক্সঃকার্যবিধির ১৬১ মতে যে সকল সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং সাক্ষীর নিকট হতে কি বিবৃতি পাওয়া গেছে।
১০। যে সকল আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে বা গ্রেফতারের চেষ্টা,
গুপ্তচর নিয়োগ ও রহস্য উদঘাটনের চেষ্টার বিবরণ।
১১। খুনের মামলায় মৃতদেহের শনাক্তকারী,
সুরতহাল ক্সতরী,
লাশ মর্গে প্রেরণ ইত্যাদির বিবরণ।
১২। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় ভিকটিমের বয়স নির্ধারণ,
মেডিকেল পরীক্ষা,
অপরাধী সনাক্তকরণ।
১৩। তদন্ত সংক্রান্তে অন্য যে সকল স্থানে গমন করা হয়েছে।
১৪। গ্রেফতারকৃত আসামীকে কোর্টে প্রেরণ,
রিমান্ডের আবেদন
১৫। প্রথম দিনের তদন্ত শেষে থানায় ফেরার সময়কাল
১৬। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারা মতে ভিকটিমের জবানবন্দী রেকর্ডের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ
১৭। গ্রেফতারকৃত আসামীদের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী গ্রহণ সংক্রান্তে নোট
১৮। জব্দকৃত আলামত পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ বরাবর প্রেরণ,
রিপোর্ট প্রাপ্তি,
পর্যালোচনা ও নোট
১৯। তদন্তের সারাংশ,
তদন্তেপ্রাপ্ত সকল সাক্ষ্য প্রমাণের সারসংক্ষেপ
২০। তদন্তের ফলাফল তথা প্রস্তুতকৃত চার্জশিট বা ফাইনাল রিপোর্টের সারমর্ম বাদীকে অবগত করানো সম্পর্কে নোট।
২১। ক্ষেত্রবিশেষ ব্রিফ প্রাপ্তি হলে পর্যালোচনা ও নোট এবং পরবর্তী গৃহীত ব্যবস্থাদির নোট।
কেস ডায়রী লেখার পদ্ধতি বা কেস ডায়রী লেখার সময় লক্ষনীয় বিষয়সমূহ নিম্নেআলোচনা করা হলোঃ
১। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭২ ধারা,
পিআরবি বিধি ২৬৩,
২৬৪ মোতাবেক বিপি ফরম নং-৩৮ এ কেস ডায়রী লিখতে হবে।
২। তদন্তকারী অফিসার নিজ হাতে কেস ডায়রী লিখবেন।
৩। কেস ডায়রী প্রতিদিন সময়মতো লিখতে হবে এবং গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে।
৪। কার্বন দিয়ে ০২ (দুই) কপি কেস ডায়রী লিখতে হবে। মূল কপি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে থাকবে,
দ্বিতীয় কপি সার্কেল অফিসে প্রেরণ করতে হবে।
৫। এসআর (স্পেশাল রিপোর্ট) তালিকাভুক্ত মামলায় কেস ডায়রী ০৩ (তিন) কপি লিখতে হবে। এ সময় তৃতীয় কপি পুলিশ সুপারের অফিসে প্রেরণ করতে হবে।
৬। প্রতিদিনের কেস ডায়রীর জন্য পৃথক ডায়রী নম্বর ব্যবহার করে হবে।
৭। মামলার তদন্তে প্রাপ্ত সকল তথ্য কেস ডায়রীকে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৮। তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বল্প সময়ের জন্য অন্য কোন বিশেষ ডিউটিতে বা প্রশিক্ষণে নিয়োজিত হলে এরূপ সময়ে তদন্তের বিরতির বিষয়টি পরবর্তী কেস ডায়রীতে উল্লেখ করতে হবে।
৯। তদন্তকালে খসড়া মানচিত্র ও সূচীপত্র প্রনয়ন,
আসামী গ্রেফতার,
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মতে আসামীর জবানবন্দী রেকর্ড,
আলামত ও চোরাইমাল উদ্ধার ও জব্দকরণ,
সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে নোট করতে হবে।
১০। চার্জশিট দাখিলের পূর্বে শেষ কেস ডায়রীতে মামলা তদন্তের ফলাফল,
তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ উল্লেখ করতে হবে।
১১। শেষ কেস ডায়রীতে এবং চার্জশিটে কোন অপরাধী কি অপরাধ করেছে,
কার বিরুদ্ধে কত ধারা প্রমাণিত হয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে।
কেস ডায়রীর প্রয়োজনীয়তাঃ
১। পুলিশ অফিসার কর্তৃক একটি মামলা সংক্রান্তে যে সকল বিষয় তদন্ত করা হয়েছে তার প্রতিবিম্ব বা সারমর্ম কেস ডায়রীতে লিপিবদ্ধ থাকে। তদন্তকারী অফিসার অন্যত্র বদলী হলে মামলার পরবর্তী তদন্তকারী অফিসার পূর্বের বিবরণী ও তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা দেখে মামলা তদন্তে সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারেন।
২। কেস ডায়রী দুই কপি লেখা হয়। কার্বন কপি সার্কেল অফিসারের নিকট প্রেরণ করা হয়। তদন্তে কোন ত্রুটি বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে তিনি তা সংশোধনের জন্য তাগিদ প্রদান করে থাকেন।
৩। মামলার চার্জশিট দাখিল করার পর তদন্তে কোন ভুলত্রুটি থাকলে কেস ডায়রী পর্যালোচনা করে তা সংশোধনের জন্য কোর্ট ইন্সপেক্টর ব্রিফ ইস্যু করে থাকেন।
৪। মামলার বিচার কালে বিচারক কেস ডায়রী পর্যালোচনা করে কিভাবে তদন্ত হয়েছে তার বিষয়বস্তু অনুধাবন করেন।
৫। তদন্তকারী অফিসার আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে তা দেখে পূর্বের তদন্তের বিষয়বস্তু স্মরন করতে পারেন। কেস ডায়রী দেখে জেরার জবাব দিতে পারেন। সাক্ষ্য আইনের ১৪৫,
১৬১ ধারা।
* পিআরবি বিধি ৬৮ মতে নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগণ কেস ডায়রী দেখতে পারেন। যথাঃ
১। তদন্তকারী অফিসার,
২। থানার ওসি,
৩। ওসি’
র উচ্চতর পদের যেকোন পুলিশ অফিসার ৪। কোর্ট অফিসার,
৫। কেস ডায়রীর ব্যাপারে বিশেষভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপারের অফিসের অফিসার বা কেরানী
৬। পুলিশ সুপার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য যেকোন অফিসার।
* পিআরবি বিধি ৬৮ মতে আসামীপক্ষের আইনজীবি কেস ডায়রী দেখতে পারেন না। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭২ ধারা ও পিআরবি বিধি ২৬৩।